Market Status: Closed
  Monday, 25 Nov '24
   18:31:14 (BST)

০৬ অক্টোবর, ২০২২, চট্টগ্রাম:

প্রতি বছরের মতো এবারও দেশে ০৩ থেকে ১৩ অক্টোবর ২০২২ উদযাপিত হচ্ছে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ । এবার সপ্তাহটির প্রতিপাদ্য বিষয় হলো " পুঁজিাবাজারের পরিপ্রেক্ষিতে টেকসই অর্থায়ন ও বিনিয়োগকারীদের সহনশীলতা ” । ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনের (আইওএসকো ) সঙ্গে যৌথভাবে দিবসটি উদযাপন করছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) । বিনিয়োগকারীদের শিক্ষার উন্নতি ও উন্নয়নের জন্য  আইওএসকো এর গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি রয়েছে-এটি একটি বিশ্বব্যাপী প্রচার, যার লক্ষ্য বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা প্রচার করা  সেই ধারবাহিকতায় চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি (সিএসই) ০৬ অক্টোবর ২০২২ তারিখে একটি ওয়েবিনার এর আয়োজন করেছে । ওয়েবিনার এর শিরোনাম ছিল" পুঁজিাবাজারের প্রেক্ষিতে টেকসই অর্থায়ন ও বিনিয়োগকারীদের সহনশীলতা ‘ ।

 

এখানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন ডঃ রুমানা ইসলাম, কমিশনার, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বিশেষ অতিথি ছিলেন জনাব সাইফুর রাহমান, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, বিএসইসি এবং সভাপতি হিসেবে উপস্থিহত ছিলেন জনাব আসিফ ইব্রাহিম, চেয়ারম্যান, সিএসই  এবং সিএসই এর সম্মানিত ট্রেক এর প্রতিনিধিগন ।

 

এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনাব মো. গোলাম ফারুক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), সিএসই এবং মূল নিবন্ধ উপস্থাপনা করেছেন মোহাম্মাদ মাহাদি হাসান, সিএফএ, চিফ রেগুলেটরি অফিসার, চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি । সার্বিক অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জনাব এম সাদেক আহমেদ, হেড অব ট্রেনিং এন্ড আওারনেস।

 

স্বাগত বক্তব্যে জনাব মো. গোলাম ফারুক বলেন, আমরা চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আর্থিক স্বাক্ষরতার উন্নয়নের জন্য বিএসইসির নির্দেশনায় নিয়মিত সেমিনার / কর্মশালা / সম্মেলনসমূহ আয়োজন করে আসছি। বর্তমান এবং ভবিষ্যতের বিনিয়োগকারীদের জন্য আমাদের বিভিন্ন ধরণের প্রোগ্রাম রয়েছে, আপনারা ন্যূনতম ব্যয়ে এই সুযোগটি নিতে পারেন। বিনিয়োগকারীদের টেকসই পণ্যের ঝুঁকি এবং বিভিন্ন আর্থিক পণ্যকে প্রভাবিত করে এমন টেকসই-সম্পর্কিত ঝুঁকি বোঝা উচিত। এই বোঝাপড়া বিনিয়োগকারীদেরকে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে এবং বিভিন্ন ঝুঁকি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সাহায্য করবে। আমাদের দেশে ইনভেস্টর এর অভাব এবং বেশিরভাগই ডে ট্রেডার যারা আইটেম বেজড ব্যবসা করে ,সেকারনে কখনো খুব লাভ করে আবার কখনো খুব লস করে । এইজন্য আমাদেরকে ইনভেস্টর তৈরি করতে হবে । বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ এর মুল প্রতিপাদ্য বিষয় গুলোকে সফল করতে হবে ।

 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনাব সাইফুর রহমান, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, বিএসইসি বলেন, সব বিনিয়োগকারীদের উচিত আপদকালীন ফান্ড রাখা । কারণ এই ফান্ড যদি না থাকে আর সব ফান্ড পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে ফেলে, তাহলে যেকোনো জরুরি প্রয়োজন হলে ক্ষতি করে অর্থের যোগান দিতে হয় । কারণ আমরা চিন্তাভাবনা না করে সঞ্চয়ের সব টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে ফেলি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঋণ নিয়ে, সম্পদ বিক্রি করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করি । যেহেতু পুঁজিবাজার ঝুঁকির জায়গা, এজন্য আমার বক্তব্য হলো- আপনারা সঞ্চয়ের একটা অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করুন।

একটি আইটেমে বিনিয়োগ না করে দেখেশুনে গবেষণা করে বিভিন্ন আইটেমে বিনিয়োগ করুন । তবে বিনিয়োগের আগে কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদে কারা রয়েছেন, কোম্পানিগুলো ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে কি না এগুলোর দেখে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান । সাসটেনেবল ফাইনান্স এর ক্ষেত্রে প্রফিট মাক্সিমাইজেশন নিয়ে যেমন ভাবতে হবে তেমনি লস এর বিষয়টাও বিবেচনা করতে হবে । এই বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উপলক্ষে ইন্টারমিডিয়ারিজ প্রতিষ্ঠানগুলো বিএসইসি-এর সাথে ইতিমধ্যে একাত্ত হয়ে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও তিনি এমন সহযোগিতা কামনা করেন । এছাড়া বিআইসিএম, বিএএসএম এবং বিএসইসি এর ফিনান্সিয়াল লিটারেসি বিভাগও বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সুরক্ষার জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষন এর আয়োজন করে যাচ্ছে । বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ এর প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি বিনিয়োগকারীদের কাছে পৌঁছানো হলো আমাদের সবার দায়িত্ব যেন তারা তাদের বিনিয়োগ এর ক্ষেত্রে এই বিষগুলোও বিবেচনা করে তাদের ইনভেস্ট করে বিনিয়োগ সুরক্ষা করতে পারে ।

এখানে প্রধান অতিথি ডঃ রুমানা ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে এখন দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ খুবই কম । সবাই আজকে বিনিয়োগ করে আজকেই গেইন করতে চায় । রাতারাতি মুনাফা তুলে নিতে চায় । এ কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিনিয়োগকারীরা । তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত ঝুঁকি কম নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করা । দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবেন-ই ।  পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তাদের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের দেশের কোম্পানিগুলো প্রথম প্রজন্মের হাতে ভালো চললেও সেকেন্ড জেনারশেনের (দ্বিতীয় প্রজন্ম) হাতে গেলেই কোম্পানিগুলো আর বেঁচে থাকতে পারে না । এগুলো কোনোরকম বেঁচে থাকলেও ভালো কিছু করতে পারে না । তার কারণ হচ্ছে কোম্পানিগুলোতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। এগুলো ঠিক করতে হবে ।

SDG  এবং ESG  এর বিষয়গুলোকে বিবেচনায় রেখে আমাদের ইনভেস্টর তৈরি করতে হবে । ২০২৪ সালে  ESG  এর লক্ষ্য সামনে রেখে আমাদের তৈরি হতে হবে , কেননা ইউরোপ ইউনিয়ন এর অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলো তাদের সাথে কাজ করবেনা যাদের ESG নাই । তাই আমাদের সাসটেনবল ফাইনান্স  এবং বিনিয়োগকারীদের সহনশীলতা  নিয়ে কাজ করতে হবে । সচেতন ইনভেস্টর তৈরি করতে হবে, অনেক রকম প্রোডাক্ট নিয়ে তাদের জানাতে হবে । এটা নিয়ে সারা বছর কাজ করতে হবে ।

 জনাব আসিফ ইব্রাহিম, চেয়ারম্যান, সিএসই বলেন, IOSCO বোর্ড-এর চেয়ারম্যান এবং হংকং সিকিউরিটিজ এন্ড ফিউচারস কমিশনের চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সম্প্রতি ঠিকই বলেছেন যে, গত দুই বছরে, বিশ্বব্যাপী মহমারিকালে, পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে। ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগের কারণে সৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার দরুন উক্ত বিনিয়োগকারীগণ এখন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। আর্থিক শিক্ষা ও  বিনিয়োগকারী প্রতিরক্ষা, যথাযথ তথ্যের ভিত্তিতে অর্থবাজারে বিনিয়োগকারীদেরই সহনশীলতা ও আস্থা  ত্বরান্বিত করতে, জোরালো ভূমিকা রাখে।   বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সকল স্টেকহোল্ডাররা বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে IOSCO-র ষষ্ঠ বিশ্ব  বিনিয়োগ সপ্তাহের কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। আমরা বিনিয়োগকারীদের বিএসইসি এবং স্টক এক্সচেঞ্জের বিভিন্ন আর্থিক স্বাক্ষরতা প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে পুঁজিবাজার সম্পর্কে তাদের সচেতনতা বাড়াতে  অনুরোধ করি। বিএসইসি আর্থিক স্বাক্ষরতা সম্পর্কিত বিষয়গুলি সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়েছে এবং বিএসইসির স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচির মাধ্যমে এগুলি সারা দেশে পৌঁছে যাবে।টেকসই অর্থায়ন (Sustainable Finance) বলতে আর্থিক খাতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় পরিবেশগত, সামাজিক ও গভর্নেন্স (ESG) বিবেচনায় নেওয়ার প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যা টেকসই অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ এবং প্রকল্পগুলিতে বিনিয়োগকারীদেরকে আরও দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের দিকে পরিচালিত করে। জাতিসংঘের Sustainable Stock Exchanges (এসএসই) উদ্যোগ, 2009 সালে প্রবর্তিত জাতিসংঘের  একটি অংশীদারিত্বমূলক কর্মসূচি। এটি UNCTAD, জাতিসংঘের গ্লোবাল কম্প্যাক্ট, জাতিসংঘের পরিবেশ  এবং দায়িত্বশীল বিনিয়োগের নীতি (PRI) দ্বারা পরিচালিত।  এটি  SDG ইস্যুতে ঐক্যমত্য ও সক্ষমতা গড়ে তুলতে স্টক এক্সচেঞ্জ, পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারী, তালিকাভুক্ত কোম্পানি, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রকদের একত্র করে।


 
এই পর্যন্ত, 1২০টি স্টক এক্সচেঞ্জ তাদের বাজারে Sustainability এগিয়ে নেয়ার জন্য UN SSE- র মাধ্যমে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। জাতিসংঘের এসএসই, Gender সমতা (SDG 5.5), SME অর্থায়ন (এসডিজি 8.3.), সিকিউরিটিজ মার্কেট রেগুলেশন (এসডিজি ১০.৫), Sustainability প্রতিবেদন (এসডিজি 12.6), সবুজ অর্থায়ন (SDG 13.3) এবং টেকসই মূলধন বাজারের জন্য অংশীদারিত্বের (SDG 17) উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। 

 
বাংলাদেশে আমরাই প্রথম জাতিসংঘ Sustainable Stock Exchanges (UN SSE) Initiative -এর Partner Exchange হয়েছি ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ সালে।   

 

 

বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের জন্য মূল বার্তা

বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের একটি মূল লক্ষ্য হ'ল বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা এবং সুরক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা। বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের দুটি প্রাথমিক উদ্দেশ্য রয়েছে:

 
১. মূল বার্তাগুলি ছড়িয়ে দেওয়া, যা বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা এবং সুরক্ষা এবং সেই সাথে আর্থিক সাক্ষরতার প্রয়োজন; এবং 
২. বিনিয়োগকারীদের জন্য শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো। 

 
একটি গৌণ উদ্দেশ্য হ'ল বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা এবং সুরক্ষার জন্য IOSCO সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা।

 

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেছেন মোহাম্মাদ মাহাদি হাসান, সিএফএ, চিফ রেগুলেটরি অফিসার, চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি । তিনি তার প্রবন্ধে বিশ্বের পুজিবাজারের ক্ষেত্রে “পুঁজিাবাজারের প্রেক্ষিতে টেকসই অর্থায়ন ও বিনিয়োগকারীদের সহনশীলতা বিষয়ে সচিত্র উপস্থাপনা সহকারে বিস্তারিত আলোচনা করেন ।

 

সবশেষে, সিএসই ডিজিএম এবং হেড অব ট্রেক মার্কেটিং সার্ভিসেস ,জনাব মোহাম্মদ মতুর্জা আলম সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ওয়েবিনার প্রোগাম শেষ করেন ।

 

বিস্তারিত জানতে,

তানিয়া

সিএসই -পি এনন্ড সি আর

ফোন: ০১৭৬০৭৪৫৭৩৬

| October 10, 2022 |