Market Status: Closed
  Monday, 25 Nov '24
   18:41:46 (BST)

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড

১৬ জুন ,২০১৯

 

প্রিয় প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইলেক্ট্রনিক সংবাদ মাধ্যমের সদস্যবৃন্দ এবং উপস্থিত ভদ্র মহোদয় ও ভদ্রমহিলাগণ আসসালামুআলাইকুম । সর্বপ্রথমে আজকের বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

 

আপনারা জানেন, মাননীয় অর্থমন্ত্রী  জনাব আ হ ফ ম মুস্তফা কামাল বিগত ১৩ জুন মহান জাতীয় সংসদে আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন মাননীয় অর্থমন্ত্রীর অসুস্থতার কারণে মাননীয়  প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা তার পক্ষে বাজেটের বড় অংশ উপস্থাপন করেন। দেশের সংসদীয় ইতিহাসে এটি  একটি অনন্য দৃষ্টান্ত ।

 

ঘোষিত বাজেটে করজালের আওতা বৃদ্ধি, হুন্ডির পরিবর্তে বৈধ পথে প্রবাসী আয় প্রেরণে প্রনোদনা এবং চার স্তর বিশিষ্ট নতুন মুল্যসংযোজন কর বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের কথা উল্লেখ রয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয় ব্যাক্ত করা হয়েছে ।পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ এর ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম এর উপর জোর প্রদান করা হয়েছে। যা পুঁজি বাজারের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করছি ।

 

বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তর করার যে রূপকল্প সরকারের রয়েছে তাতে ব্যাপক ভাবে বেসরকারী পুঁজি সঞ্চালনের প্রয়োজন। আর এ লক্ষ্য পূরণের জন্য পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আমরা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি । শুধুমাত্র ব্যাংক ঋণ নির্ভর বেসরকারী বিনিয়োগ এবং পুঁজি সঞ্চালন একদিকে যেমন ব্যাংক ব্যাবস্থার দূর্বলতা তৈরি করে অন্যদিকে পুঁজিবাজারের বিকাশেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে । এই প্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারে টেকসই উন্নয়ন এবং গুণগত সম্প্রসারণের জন্য ব্যাপক কৌশল প্রণয়ন করা প্রয়োজন । এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড বিগত ২রা এপ্রিল ২০১৯ তারিখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর আমন্ত্রণে ৮টি প্রস্তাবনা বিবেচনা করার জন্য উপস্থাপন করে । এর মধ্যে মাত্র করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা প্রস্তাবটি আংশিকভাবে গ্রহন করা হয়েছে। সিএসই এর প্রস্তাবনার বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনার জন্য আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

 

. তালিকাভুক্ত কোম্পানীসমূহের বিদ্যমান কর হার ২৫% থেকে কমিয়ে ২০% করা হলে ভাল কোম্পানীসমূহ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে, যা পুঁজিবাজারকে সমৃদ্ধ করবে এবং স্বচ্ছ কর্পোরেট রিপোর্টিং এর মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ও বৃদ্ধি পাবে ।

 

২. নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি সমূহের আয় তিন বছর করমুক্ত রাখা হলে অতালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহ তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে । এতে পুঁজিবাজারে গুণগত মানসম্পন্ন শেয়ারের যোগান বাড়বে যা বাজারে লেনদেন বৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা আনয়নে ভূমিকা পালন করবে ।

 

৩. প্রস্তাবিত বাজেটে SME কোম্পানিসমূহের করমুক্ত আয় সীমার জন্য বার্ষিক লেনদেন ৩৬ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা বাড়ানো হয়েছে । স্টক এক্সচেঞ্জে নতুন প্রবর্তিত SME বোর্ড বাস্তবায়ন, একটি মানসম্মত কর্পোরেট কাঠামো এবং রির্পোটিং এর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর জন্য SME কোম্পানিসমূহকে তিন বছর শূন্য হার কর নির্ধারন করার প্রস্তাব পুনঃব্যক্ত  করছি ।

 

৪. ঘোষিত বাজেটে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আমাদের প্রস্তাবিত সীমা ০১ লক্ষ টাকায় উন্নীত করার জন্য অনুরোধ করছি ।

 

৫ ক. দেশের অর্থনীতির আকার এবং ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতার প্রেক্ষিতে একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট তৈরির লক্ষ্যে সকল প্রকার বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয়কে করমুক্ত রাখা এবং জিরো কূপন বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয়ের করমুক্ত সুবিধা ব্যাংক, ইনস্যুরেন্স ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সকল করদাতাকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব পুনঃবিবেচনার আহবান করছি ।

 

৫ খ. ২০১৩ সালের অর্থ আইন অনুযায়ী ৫৩ বিবিবি ধারা থেকে বণ্ড শব্দটি ডিলিট করা হয় । কিন্তু অন্যান্য আইনে সিকিউরিটিজ এর সংজ্ঞায় বন্ড অর্ন্তভুক্ত থাকায় বন্ড লেনদেনের উপর ০.০৫% হারে উৎসে কর কর্তন করা হয় । একটি শক্তিশালী এবং পৃথক বন্ড মার্কেট গঠনের লক্ষ্যে স্পষ্টভাবে উক্ত ধারা থেকে বন্ড লেনদেনকে অব্যহতি রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছি ।

 

৬.এডিবি ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সম্পাদিত ঋণ চুক্তির শর্ত হিসেবে প্রণীত ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রেখেছি । ডিমিউচুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে সরকারও আমাদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে আসছে ।

 

বর্তমানে সিএসই ক্রমহ্রাসমান হারে আয়কর প্রদান করে, যা এই অর্থবছরে শেষ হবে । এক্সচেঞ্জ ডিমিঊচ্যুয়ালাইজেশন  আইন ২০১৩ এর বিধান অনুযায়ী মোট ইস্যুকৃত শেয়ারের শতকরা পঁচিশ ভাগ কৌশলগত বিনিয়োগকারীর নিকট বিক্রয় করতে হবে। সিএসই এখনো আইন অনুযায়ী কৌশলগত বিনিয়োগকারী নির্ধারণ করতে পারেনি । কৌশলগত বিনিয়োগকারীর নিকট শেয়ার বিক্রয়ের জন্য চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) পাঁচ বছরের জন্য কর অব্যহতির সুবিধা দেয়া হলে ডিমিঊচ্যুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী কৌশলগত বিনিয়োগকারী পেতে সহায়ক হবে এবং একই সাথে তুলনামূলক ছোট এক্সচেঞ্জ হিসেবে দেশের পুঁজিবাজারে যথাযথ ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে ।

 

৭. স্টক ব্রোকারাদের উৎসে কর কর্তনের হার পুনঃ নির্ধারণের বারংবার আনুরোধ সত্ত্বেও এই হার পূর্ববর্তী ০.০৫% বহাল রয়েছে । অধিকাংশ ব্রোকিং হউজ বর্তমানে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তিত হওয়া সত্ত্বেও এসকল ব্রোকারেজ হউজগুলো থেকে ক্রম বর্ধমান হারে কর আদায় আয়রকরের মৌলিক নীতিরও পরিপন্থী বলে আমরা মনে করি । বিদ্যমান পরিস্থিতিতে স্টক ব্রোকারদের উৎসে কর কর্তনের হার ২০০৬ সালে চালুকৃত হারে অর্থাৎ ০.০১৫% এ পুনঃ নির্ধারণের জর দাবি জানাচ্ছি।

 

এবারের বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় নির্দিষ্ট কর প্রদান সাপেক্ষে বৈধ করণের বিধান রাখা হয়েছে যা ফ্ল্যাট , জমি কেনা এবং ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগ করা যাবে । এক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে  বিনিয়োগের জন্য কোন বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়নি । পাচার  রোধ করা ও বিনিয়োগের স্বার্থে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনা প্রশ্নে নির্দিষ্ট পরিমান কর দেওয়া সাপেক্ষে পুঁজিবাজারেও বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি ।

 

  • প্রস্তাবিত বাজেটে রুগ্ন কোম্পানিকে ভাল কোম্পানি কতৃক একত্রীকরন/অধিভূক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এটি পুজিবাজারের জন্য একটি ভাল প্রস্তাব ।
  • ঘোষিত বাজেটে নগদ লভ্যাংশের পরিবর্তে বোনাস লভ্যাংশের উপর ১৫% হারে করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও প্রস্তাবিত বাজেটে রিটেইনড আর্নিংস বা রিজার্ভ যদি পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হয় তবে বাড়তি রিজার্ভের উপর ১৫ শতাংশ হারে করের প্রস্তাব করা হয়েছে । যা কোম্পানিগুলোকে নগদ লভ্যাংশ প্রদানে উৎসাহিত করবে বলে আমরা আশা করছি ।
  • বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য লভ্যাংশ আয়ের দ্বৈত কর তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বাজারে একটি ইতিবাচক প্রভাব পরবে ।

 

আমাদের প্রত্যাশা থাকবে বাজেটে আমাদের বক্তব্যগুলো পুনঃবিবেচনা করা এবং অন্তর্ভুক্ত করা ।

 

পরিশেষে আমাদের এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতির জন্য সবাইকে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি ।

---------------------------------------------------------------

 

 

| June 16, 2019 |